ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় চার সৈনিক নিহত এবং ৬০ জনের বেশি সৈন্য আহত হয়েছে।
হাইফা শহরের বিশ মাইল দক্ষিণের বিনিয়ামিনা সংলগ্ন একটি ঘাঁটিতে ওই হামলায় আরও সাতজন সৈন্য গুরুতর আহত হয়েছে বলেও আইডিএফ জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা আইডিএফ এর গোলানি ব্রিগেড এলাকার একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প লক্ষ্য করে হামলাটি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। এর অবস্থান তেল আবিব ও হাইফার মাঝামাঝি এলাকায়।
হিজবুল্লাহর মিডিয়া অফিস জানিয়েছে বৃহস্পতিবার বৈরুত ও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি হামলার জবাবে তারা এই হামলা চালিয়েছে।
তাদের দাবি তারা ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে ক্যাম্পটিকে টার্গেট করে তারা ‘ড্রোনের ঝাঁক’ ব্যবহার করেছে।
ইসরাইলি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস (এমডিএ) জানিয়েছে হামলায় ৬১ জন আহত হয়েছে এবং এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের মধ্যে ৩৭ জনকে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা হেলিকপ্টারযোগে আটটি আঞ্চলিক হাসপাতালে নেয়া হয়।
তবে কতজন গুরুতর আহত হয়ে সে বিষয়ে এমডিএ ও আইডিএফের তথ্যের অসঙ্গতির কারণ জানা যায়নি।
তবে ইসরাইলি সেন্সরশিপ নীতিমালা অনুযায়ী আইডিএফ বিনিয়ামিনা ঘাঁটির বিষয়টি নিশ্চিত করার আগে মিডিয়াগুলো এ বিষয়ে রিপোর্ট করতে পারেনি।
কিছু ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী লেবানন থেকে আসা ড্রোনটি ওই ঘাঁটিতে আঘাত করেছে। কিন্তু এটি তুলনামূলক ভাবে খুব বেশি উন্নত নয় বলে অগ্রিম সতর্কবার্তা সক্রিয় হয়নি।
পুরো সন্ধ্যা জুড়ে টেলিভিশন বুলেটিন, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ও অনলাইন রিপোর্টগুলোতে হেলিকপ্টার সহ জরুরি যানবাহনে করে আহতদের ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়ার ফুটেজ দেখানো হয়।
আহতদের অনেককে হাদেরার কাছে হিল্লেল ইয়াফ্ফি মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। অন্যদের তেল হাশমের, হাইফা, আফুলা ও নেতানিয়াতে নেয়া হয়।
ঘটনার বিস্তারিত তথ্য এখনো আসেনি। তবে আহতদের অনেকে একটি ক্যান্টিনে ছিলেন এবং বিস্ময়করভাবে হামলার শিকার হন।
সামাজিক মাধ্যমে যেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে তাতে সেখানকার খালি খাবার ঘরের ছাদে বড় গর্ত দেখা যাচ্ছে।
গাজার স্কুলে ইসরাইলি হামলা
ওদিকে গাজায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে ইসরাইলি হামলায় পনের জন নিহত হয়েছে বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গাজার হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে রোববার নুসেইরাত আশ্রয় শিবিরে গোলার আঘাতে একটি পুরো পরিবার নিহত হয় এবং আহত হয় আরও অনেকে।
আইডিএফ বলছে তারা খবরটি পর্যালোচনা করে দেখছে।
এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চলে খেলার সময় ড্রোন হামলায় পাঁচ শিশু নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন আল মুফতি স্কুলে শত শত বাস্তুহারা মানুষ অবস্থান করছিলো। হামলায় সেখানে এক ডজনের বেশি মানুষ নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
এখন গাজার উত্তরাঞ্চলেই মূলত সংঘাত হচ্ছে। বড় ধরনের অভিযানের অংশ হিসেবে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। সেখানকার কর্তৃপক্ষ বলছে এসব হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে।
বেইত হানৌন, জাবালিয়া ও বেইত লাহিয়ার অধিবাসীরা নিকটবর্তী গাজা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেখানকার শহরতলীতে ইসরাইলি ট্যাঙ্ক দেখা গেছে।
হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় উপকরণ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে নয় দিনের চেষ্টার পর তারা রেডক্রসের সাথে যৌথভাবে দুটি হাসপাতালে উপকরণ সরবরাহ করেছে।
ওদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে যে পাঁচটি শিশু আল শাতি শিবিরে রাস্তায় খেলার সময় নিহত হয়েছে তারা ইসরাইলি বিমান হামলার শিকার হয়েছে।
নিহত শিশুদের একজনের আত্মীয় বলেছে যুদ্ধের কারণে জাবালিয়ার বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ওই শিশুটির পরিবার আল শাতিতে এসেছিলো।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গত এক বছরে যুদ্ধে অন্তত ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। গাজার চব্বিশ লাখ মানুষের মধ্যে উনিশ লাখই যুদ্ধের কারণে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। যাদের অনেকে একাধিকবার বাসস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।