ঢাকা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার ও নির্বাচনের দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এ তথ্য জানান।
গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এবং অংশ নেওয়া সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, “আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।“
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা জাতির বিবেক এবং গণমাধ্যম জাতির দর্পণ। গত সাড়ে ১৫ বছর বিভিন্ন কারণে অনেকে তার বিবেক অনুযায়ী কাজ করতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য করা হয়েছে সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্য, সরকারকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য মিথ্যা-বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনে।”
জামায়াতে ইসলাম অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তবে, যারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত, মানুষ খুন করেছেন, গুম করেছেন, লুণ্ঠন করেছেন, অর্থপাচার করেছেন, আয়নাঘর তৈরি করেছেন, দিবা-রাত্রি মানুষের ওপর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন, তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক এটা আমরা দাবি করি। আমাদের ওপর যেমন জুলুম করা হয়েছে, তাদের ওপর তেমন জুলুম করা হোক, সেটা আমরা চাই না।”
তিনি বলেন, “এই সরকার একটি নির্দলীয় সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারা দেশ শাসনের জন্য আসেননি। দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য তারা এসেছেন। তাদের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। এ জন্য কিছু মৌলিক বিষয় তাদের সংস্কার করতেই হতো। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন, সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।”
কী কী সংস্কার প্রয়োজন সে বিষয়ে জামায়াতে ইসলামের প্রস্তাবনা আগামী ৯ অক্টোবর গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবেন বলে জানান দলটির আমির।
দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আজকের বৈঠকে কথা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি অন্তর্বর্তী সরকার কোনো পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না রেখে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটি ভালো জায়গায় নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। সেইসঙ্গে আমরা এটাও আশা করছি যে এই সময়টা নাতিদীর্ঘ হবে। শুরু থেকেই বলে আসছি, সংস্কারের জন্য আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। এই যৌক্তিক সময় কতটা, সে বিষয়ে আমরা অচিরেই কাজ করব এবং আপনাদের সামনে সেটা চলে আসবে।”
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “এর জন্য সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করলে একটি অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা আমাদের হিন্দু ধর্মের ভাই-বোনেরা উদযাপন করতে পারবেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে তার দল।
তিনি বলেন, “আমরা সরকারকে শুধু বলেছি, জনগণের বিশাল প্রত্যাশা আছে আপনাদের কাছে। এই প্রত্যাশা আমরা টেনে আর লম্বা করব না। এর জন্য ‘যৌক্তিক সময়ে’র সম্মান যেন আমরা রাখতে পারি, সেদিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ নিয়ে তারা কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি।”
সংস্কারের জন্য করা কমিশনগুলোর কয়েকজন সদস্য নিয়ে জামায়াতের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের আপত্তি বড় কথা নয়। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে যদি উদ্বেগ উত্থাপন করে সেটাই বড় ব্যাপার। আমরা দলগতভাবে কোনো আপত্তি তুলিনি।”
ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম প্রমুখ।
এতে সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।