বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব চলমান দাবা অলিম্পিয়াডে ইসরাইলের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ বয়কট করেছেন। গাজা ও ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ইসরাইলের ক্রমাগত আক্রমণের প্রতিবাদে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দাবা খেলার বিশ্ব সংস্থা ফিদে দ্বৈত নীতি অবলম্বন করছেন বলেও অনুভব করছেন তিনি।
বাংলাদেশের পাঁচজন গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রাজিব গত শুক্রবার রাতে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ম্যাচ বয়কটের ঘোষণাটি দেন। ২০২৪ অলিম্পিয়াডের উন্মুক্ত বিভাগের দশম ও চূড়ান্ত রাউন্ডে বাংলাদেশের চার প্রতিযোগীর মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। তার নাম দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ওই রাউন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইসরাইলকে পায় বাংলাদেশ।
#BoycottIsrael ও #StandWithJustice- এই দুটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের স্বীকৃত পেজে রাজীব লেখেন, “২০২২ সালের চেন্নাই দাবা অলিম্পিয়াডসহ ২০২৪ সালের হাঙ্গেরি দাবা অলিম্পিয়াডে রাশিয়া ও বেলারুশ দল হিসেবে অংশ নিতে পারেনি। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরাইল কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে? কালকে (শনিবার) তাদের খেলা বাংলাদেশের সঙ্গে পড়েছে। আমি বয়কট করলাম।”
নবম রাউন্ড শেষে ৭৫তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ পুরুষ দাবা দল শেষমেশ তিনজন প্রতিযোগীতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তারা হলেন আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান, ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড় ও ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া। দলে থাকা আরেকজন খেলোয়াড় গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদকে দশম রাউন্ডে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল শনিবার বুদাপেস্ট থেকে ফোনে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে রাজিব নিজের সিদ্ধান্তের পেছনের যুক্তি তুলে ধরেন, “ইসরাইলি জনগণের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তারা চমৎকার মানুষ এবং আমি তাদের বিপক্ষে ব্যক্তিগতভাবে খেলতে পারি। তবে আমি ইসরাইল সরকার এবং তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে সেটার বিরুদ্ধে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি ইসরাইল দলের বিপক্ষে খেলতে চাই না।”
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে একটি কনসার্টে হামাসের হামলার পর স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তাদের প্রতিশোধ অভিযানে গাজা ও অধিকৃত অঞ্চলে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরাইলের এই নীতি নিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পাশাপাশি ইসরাইল রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা বাংলাদেশেও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।
৪৪ বছর বয়সী এই গ্র্যান্ডমাস্টার প্রশ্ন রাখেন, “রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিদে রাশিয়া ও বেলারুশকে তাদের নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে খেলতে নিষেধ করেছে। রাশিয়ান ও বেলারুশিয়ানদের কেবল ফিদের সমন্বিত দলের অংশ হিসেবে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়। তাহলে ইসরাইল যখন ফিলিস্তিন দখল করছে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, ফিদে কেন তখন ইসরাইলকে আলাদা দল হিসেবে খেলতে দেবে?”
রাজিব জানিয়েছেন, তিনি অতীতে ইসরাইলি প্রতিযোগীর বিপক্ষে খেলেছেন। ১৯৯৬ সালে দাবা অলিম্পিয়াডে ইসরাইলের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ দলও। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এবং ফিদের দ্বৈত নীতি দেখে তিনি এবার প্রতিবাদ করছেন।
প্রতিপক্ষকে ওয়াকওভার দেওয়ার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকলেও নিজের নৈতিক অবস্থানে অনড় রাজীব, “ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন আমি বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছি। আমার ক্যারিয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল তখন। আমি এমন কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা থেকে পিছপা হব না যা আমি খুব দৃঢ়ভাবে অনুভব করি। আমার কাজের জন্য ফিদে কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা আমি জানি। কিন্তু আমি তা মেনে নিতে রাজি আছি।”
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন শামীম বলেন, তারা রাজীবকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। রাজীবকে ছাড়া দশম রাউন্ডে খেলে ৩-১ ব্যবধানে ইসরাইলের কাছে পরাস্ত হয়েছে বাংলাদেশ।