গাইবান্ধা: পলাশবাড়ী উপজেলায় জমি বিক্রির টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মৃত্যুর দুই দিন পর মোতাহার হোসেন (৭৫) নামের এক ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামে পুলিশের হস্তক্ষেপে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
মৃত মোতাহার হোসেন একই গ্রামের নজরুল ইসলামের বড় ভাই। মোতাহার ঢাকায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের অফিস সহকারী ছিলেন। গত মঙ্গলবার রাতে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
আজ শুক্রবার সকালে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে লাশ দাফনের বিলম্বের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পারিবারিকভাবে অর্থসংক্রান্ত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হওয়ায় গতকাল রাতে মোতাহার হোসেনের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোতাহার হোসেন কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে অবসরে যান। তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নিয়ে তিনি ঢাকায় থাকতেন। তারা নিঃসন্তান দম্পতি। কিছুদিন আগে মোতাহার হোসেন অসুস্থ হন। তিনি চিকিৎসার জন্য ঢাকায় থাকা একখণ্ড জমি দুই কোটির বেশি টাকায় বিক্রি করেন। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার তিনি মারা যান।
পরদিন মোতাহার হোসেনের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে পলাশবাড়ী উপজেলার মাঝিপাড়া গ্রামে আনা হয়। সেখানে লাশ দাফনে বাধা দেন মোতাহার হোসেনের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম, তার ভাতিজা হাবিবসহ পরিবারের কয়েকজন। এ সময় তারা মাসুমা বেগমের কাছে মোতাহার আলীর কাছে থাকা জমি বিক্রির টাকা কোথায় আছে, তা জানতে চান। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে লাশ দাফন আটকে থাকে। স্থানীয় লোকজন ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পলাশবাড়ী থানা-পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ সদস্য ও বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে সমঝোতা করে দেন। এরপর তাদের উপস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জানাজা শেষে মোতাহার আলীর লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে জানার জন্য মোতাহার হোসেনের ছোট ভাই নজরুল ইসলামের ফোন করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মোতাহার আলীর ভাই ও ভাতিজাদের দাবি, মোতাহার আলী নিজ নামের জমি বিক্রির টাকা স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রাখেন। পরে তার স্ত্রী মাসুমা বেগম ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। সেই টাকার তারাও অংশীজন। এ নিয়ে বিবাদ হয়, ফলে লাশ দাফনে দেরি হয়েছে।
মোতাহার আলীর ভাই ও ভাতিজারা আপত্তি জানানোর কারণে লাশ দাফনে বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেতকাপা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও বলেন, দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা করে দেওয়া হয়। মাসুমা বেগম তার স্বামী মোতাহার আলীর ভাই ও ভাতিজাদের কিছু টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরই নিজ বাড়িতে লাশ দাফন করা হয়েছে।