ময়মনসিংহ: গফরগাঁও উপজেলায় হারুনুর রশিদ (৫৫) নামের এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের গয়েশপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে রুবেল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সেই সঙ্গে রুবেল মিয়ার বাড়িতে আগুন দিয়েছে এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত হারুনুর রশিদ পাইথল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি পাইথল ইউনিয়নের গোয়ালবর গ্রামের খুরশেদ আলমের ছেলে। তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে গয়েশপুর বাজারে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনা করতেন। অভিযুক্ত রুবেল মিয়া একই ইউনিয়নের নেওকা গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা একটার দিকে হারুনুর রশিদ গয়েশপুর বাজারে নিজের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকেন্দ্র বন্ধ করে বাজারের একটি দোকানে চা পান করেন। চা পান শেষে তিনি বাড়িতে যাওয়ার সময় তার ওপর রুবেল মিয়া হামলা করেন। রুবেল প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি হারুনকে কোপান। এতে ঘটনাস্থলেই হারুনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরপরই রুবেল মিয়াকে স্থানীয় লোকজন ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। এরপর উত্তেজিত এলাকাবাসী নেওকা গ্রামে রুবেল মিয়ার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ চারটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
উত্তেজিত এলাকাবাসী অভিযুক্ত রুবেল মিয়ার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খায়রুল বাশার বলেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে হারুনুর রশিদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে কাজ করছেন তারা। এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলা হলে আটক ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। ওই ব্যক্তি পিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, অভিযুক্ত রুবেল মিয়া মাদকাসক্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত। এর আগেও তিনি মানুষকে মারধর করে জখম করেছেন। নিহত হারুনুর রশিদের এক স্বজনকে ২০১৩ সালে কুপিয়ে আহত করেছিলেন রুবেল মিয়া। এ নিয়ে চলমান মামলার সাক্ষী ছিলেন হারুন। এর বাইরে স্থানীয় লোকেরা হত্যার কোনো কারণ জানতে পারেননি।
হারুনুর রশীদকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে: রিজভী
ডা. হারুনুর রশিদকে কুপিয়ে নির্মমভাবে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন তিনি। রিজভী বলেন, হারুনুর রশিদকে সোমবার প্রকাশ্যে কুপিয়ে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এই হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী পৈশাচিকতার আরেকটি বর্বর দৃষ্টান্ত। আওয়ামী লীগ যে মানবিকবোধশূন্য রাজনৈতিক দল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো হারুনুর রশিদকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার মাধ্যমে।
তিনি বলেন, “হত্যা ও গুমের সংস্কৃতি তৈরি করে আওয়ামী লীগ অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে চাচ্ছে। বাংলাদেশে রক্তাক্ত জনপদ ছাড়া জনগণকে তারা আর কিছুই দিতে পারেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠানের পর জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদী জনগণকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগরে রক্ত ঝরাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নানা এজেন্ডার মধ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা একটি অন্যতম এজেন্ডা। ভোটারশূন্য নির্বাচন করে তাদের ফ্যাসিবাদী চেহারা আরো হিংস্র রুপ ধারণ করেছে।”
রিজভী বলেন, “দেশে চরম মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি এবং জনজীবনে হাহাকার আর নৈরাশ্য বজায় রাখতে অবৈধ সরকার বিরোধী দলের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ শুরু করেছে। এর সর্বশেষ শিকার হলেন আওয়ামী সন্ত্রাসী রুবেল কর্তৃক হারুনুর রশীদকে নির্মমভাবে হত্যা। তবে এভাবে হত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে আওয়ামী লীগ আর টিকে থাকতে পারবে না, প্রতিটি নির্মমতা ও হত্যাকান্ডের জবাব জনগণ একদিন কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নিবে।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অবিলম্বে হারুনুর রশিদকে হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকাহত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন।