অতিরিক্ত পরনির্ভশীলতা কি দুর্বল বা ছোট দলের প্রাসঙ্গিকতা ও উপযোগিতা কমাতে পারে? বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তেমন ইঙ্গিতই দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ৷
একসময় মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ১৪ দলীয় জোট এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলেও এবার তারা মাত্র ২টি আসনে জিতেছেন। আওয়ামী লীগের কাছে ছোট দলগুলোর প্রয়োজনীয়তা কি ফুরিয়ে যাচ্ছে?
অধ্যাপক এম এম আকাশ: একই প্রশ্ন শেখ হাসিনাকে করা হয়েছিল, শেখ হাসিনা বলেছেন- আমার কী দোষ, ওরা শক্তি বাড়াতে পারেনি, ওরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল থেকেছে, সুতরাং ওরা দুর্বল হয়ে গেছে, আমি তো আর ওদের দুর্বল করিনি। এই কথার মধ্যে কিছুটা সত্যতা আছে। কারণ, যখন তাদের জোটে ছিল জোটের ভেতরে আওয়ামী লীগের দুর্বলতা, ত্রুটি এবং একপেশে পলিসি এবং ভুল পলিসির বিরুদ্ধে তারা তীব্র অবস্থান গ্রহণ করেননি। বরং অনেকটা লয়াল অপজিশনের ভূমিকাতেই তারা ছিল। এবারো নির্বাচনে তাদের কাছে দুটো চয়েস ছিল- নৌকা মার্কা ছাড়া নির্বাচন করা অথবা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করা। দেখা গেছে, তারা ঝোলাঝুলি করছে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে তাদের দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে। এটা থেকে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগের কাছে হয়তো শক্তিমান দলের প্রয়োজনীয়তা আছে, কিন্তু তারা যেহেতু দুর্বল হয়ে গেছে, সুতরাং আওয়ামী লীগ তাদেরকে পাত্তা দেয়নি।
দুর্বল হয়ে পড়া দলগুলোর করণীয় কি?
তাদের পুনরায় বিবেচনা করা উচিত লয়াল অপজিশনের ভূমিকায় থাকবো, নাকি প্রকৃত অপজিশনের ভূমিকায় থাকবো। যদি প্রকৃত অপজিশনের ভূমিকায় তারা থাকতে চান, তাদেরকে ইন্ডিপেনডেন্ট পলিসি, ইন্ডিপেনডেন্ট কন্সটিটিউয়েন্সি, ইন্ডিপেনডেন্ট স্ট্রাগল এবং কোনো কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগ সুবিধা দিতে চাইলেও সেই সুবিধা প্রত্যাখ্যান করার শক্তি অর্জন করতে হবে।
ছোট দলগুলো কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
তারা তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবেই না, বরঞ্চ দলের মধ্যে যারা ভালো, তারা দলত্যাগ করে কেউ বাম দল বা একটু মোর অপিজিশন, মোর ইনিডপেনডেন্ট, অটোনমাস- এইসব শক্তির সঙ্গে যাবে বা সিভিল সোসাইটির সঙ্গে যাবে অথবা রাজনীতি ছেড়ে দেবে। আর যারা রাজনীতিতে থাকবে লয়াল অপজিশন বা লয়ালটি এবং আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নেবে, তারা আওয়ামী লীগেই যোগ দিয়ে দেবে।
ছোট ছোট দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে কতটা প্রভাব রাখে?
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নিয়েছে। তখন যে ভাগ ছিল পাকিস্তানপন্থি এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। সেই ভাগের এখন আর যৌক্তিকতা নেই, কারণ, এখন আমরা স্বাধীন দেশ। এখানে যে শ্রেণি রাজনীতি বা ইকোনমিক পলিসির ভিত্তিতে রাজনীতি বা জনগণ এবং জনবিরোধী- এই ভিত্তিতে যে রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল, সেটি ডেভেলপ না করে মুক্তিযুদ্ধের নামেও জনবিরোধী রাজনীতি চলছে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধেও যারা ছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের একাংশকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে এমন একটি জোট গঠন করেছে যেটাকে মানুষ গ্রহণ করতে পারছে না।
মানুষের কাছে আসলে একটি প্রকৃত বিরোধী দল নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি যেই ক্ষমতায় আসুক কোনো পরিবর্তন হবে বলে তারা মনে করে না। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় বারণ, এটাই হচ্ছে মানুষের সাধারণ উপলব্ধি। সেজন্য এক রাবণকে বদলে আরেক রাবণকে এনে সমস্যার সমাধান হবে না। এই কারণে রাবণদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। কিন্তু মুশকিল হলো, রাবণদের বাইরে যারা, তারা কিন্তু শক্তি নিয়ে এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আস্থাবান বিকল্প হতে পারেনি। সেজন্য মানুষ উদাসীন, ৬০% মানুষ ভোট দিতে যায়নি।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অনুগতরা একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় মানুষ পরিবর্তনের আশা দেখেনি। বিএনপি যে আন্দোলন করে এটিকে বদলে একটি ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, সেটাও বিএনপি করতে পারেনি। কারণ, বিএনপির যে নেতৃত্ব, প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণভাবে বড় সমাবেশ করতে পারছিল, পরে ছোট্ট ঘটনা দিয়ে ওরা বসে গেলে এবং আর উঠে দাঁড়াতেই পারলো না। সুতরাং, গণঅভ্যুত্থান করে নির্বাচনকে ঠিকঠাক করে তার মুখে নির্বাচনে যোগ দিয়ে নির্বাচন করার যে সুযোগ ছিল সেটিও বিএনপি হারালো। আর আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করলো, মানুষ ন্যাচারালি এমনিতেও জানে যে, আওয়ামী লীগের ভেতরে পরিবর্তন করে এই মন্ত্রী বদলে ওই মন্ত্রী আসলে, এই সংসদ বদলে ওই সংসদ আসলে, ইকোনমিক পলিসি বা অন্যান্য যা কিছু তা তো আর পরিবর্তন হচ্ছে না। আর বিএনপিকে তো তারা আগেই মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে পেরেছে।
দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকলো বিএনপি। রাজনীতিতে দলটির ভবিষ্যৎ কী?
বিএনপি ভেবেছিল, তাদের এক দফার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। তারপর তারা নতুন অন্তর্বতীকালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। কিন্তু এটা করার জন্য যে গণআন্দোলন, গণপ্রচার এবং যে ইস্যুগুলো আনার দরকার ছিল, সেটা তারা করতে পারেনি। তারা নির্ভর করেছিল বৈদেশিক শক্তি ও আমেরিকার স্যাশনের ওপর। একপর্যায়ে তারা ভারতের সঙ্গে তারা সম্পর্ক ভালো করারও চেষ্টা করেছিল। বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা অথবা আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। যেহেতু নিজস্ব শক্তি ছিল না এবং জনগণের ইস্যুতে কোনো গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি, সেজন্য তারা ব্যর্থ হয়েছে।
এখন তাদের (বিএনপি) কাছে দুটি পথ রয়েছে- আবার গণআন্দোলনের চেষ্টা করা, কিন্তু এই ভাঙা হাটে সেটা তারা করতে পারবে না। তাদের যে বেসিক উয়িকনেস, জামায়াতের সাথে বন্ধুত্ব এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্ব- এই দুটো জিনিস নিয়ে মানুষের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তারেক রহমানের দণ্ড হয়েছে, খালেদা জিয়া তো শারীরিকভাবে সক্ষম নন, তারেক জিয়ার পক্ষেও এখানে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব না। সুতরাং বিএনপি নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে। বিএনপি যদি জামায়াত থেকে বেরিয়ে এসে তারেক জিয়াকে বাদ দিয়ে দল পুনর্গঠন করে তাহলে তাদের একটি ভবিষ্যৎ থাকবে, তবে এটা করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। তাদের মধ্যে যারা খুবই গোঁড়াভাবে এই দুই শক্তির সঙ্গেই বিএনপিকে রাখতে চায়, তারা বিএনপিতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাবে। আর যারা এই দুটোর কোনোটাই চায় না তাদের কেউ কেউ হয়ত রাজনীতি ছেড়ে দেব, দল ত্যাগ করবে অথবা কিংস পার্টি বা আওয়ামী লীগে যোগ দেবে।
বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা সাজাপ্রাপ্ত হলেও দলে এখনো তাদেরই প্রাধান্য। এটি দল হিসেবে বিএনপিকে পেছনে ঠেলছে কিনা...
এভাবে চলতে থাকলে তারা আরো ছোট হয়ে যাবে। এবার যেমন গণআন্দোলন করে নির্বাচনকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের অধীনে নিতে পারেনি, আগামী ৫ বছরেও সেটা পারবে না।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হলে বিএনপির অবস্থান কেমন হতে পারে?
তখন বিএনপি শুরু করবে এই নির্বাচন মানি না, এই নির্বাচন বাতিল করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, এই সরকার অবৈধ। কিন্তু সাধারণ মানুষের নিস্ক্রিয়তার কারণে গণঅভ্যুত্থান বা গণআন্দোলের অভাবের কারণে এটা সম্ভব হবে না। তখন তাদেরকে অন্য ইস্যু আনতে হবে, সরকারের কি দুর্বলতা আছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। সরকারের একটি বড় দুর্বলতা হলো গণতন্ত্রহীনতা। কারণ, এখানে একজন ব্যক্তি, একটি দলের হাতে সব ক্ষমতা। এখন এটি আরো অ্যাবসোলিউট হবে। আমরা জানি পাওয়ার করাপ্ট, অ্যাবসোলিউট পাওয়ার করাপ্ট অ্যাবসুলেটলি। এখানে সেই জিনিসগুলো আরো বাড়বে। এতে মানুষের যে সাফারিং হবে, সেগুলোকে ধরে যদি আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারে, সেটি যে দলই করুক সেটি বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা বামপন্থীরাই করুক, তাদেরই ভবিষ্যৎ আছে, অন্যদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই।
আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা হলো- দুর্নীতি, সুশাসনের সংকট, ঋণখেলাপী, জ্বালানি অপরাধী, অ্যাকাউনটিবিলিটি ও টান্সপারেন্সির অভাব। পার্লামেন্টে আরো বেশি ব্যবসায়ীদের প্রভাব এগুলোকে কীভাবে ট্যাকেল করে প্রধানমন্ত্রী যে জনকল্যাণমূলক অর্থনীতির কথা বলেন সেটি কতটুকু ফিরিতে আনতে পারবেন।
শেখ হাসিনা চাইলেই কি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবেন?
সেটির সম্ভবনা খুবই কম। পাওয়ার তো এমনিতেই মানুষকে করাপ্ট করে। অ্যাবসোলিউট পাওয়ার করাপ্ট অ্যাবসোলিউটলি। এবং আওয়ামী লীগ চারবার ক্ষমতায় গিয়ে এখন স্বতন্ত্রসহ টুকিটাকি দিয়ে লয়াল অপজিশন বানিয়ে ক্ষমতায় থাকবে, এটি আরো অ্যাবসোলিউট হবে।
নিবন্ধন নেই এমন অনেক দলকে সঙ্গে নিয়ে জোট করেছে বিএনপি। এতে বিএনপির রাজনীতিতে কী লাভ হচ্ছে?
বিএনপির দুটো কন্সটেন্ট, একটি হলো জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত, আরেকটি হলো তারেক জিয়ার মতো একজন ইয়াং কিন্তু ক্রিমিনাল লিডারশিপকে মেনে নেওয়া। এ দুটি দূর না করে বিএনপি এগোতে পারবে না।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নেই। বিএনপির সঙ্গেও তারা আগের মতো আন্দোলনে নেই। এটিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
গত আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জামায়াত অগ্রসর হওয়ার কিছুটা চেষ্টা করেছে। তাদের ঐক্য হলো আওয়ামী লীগবিরোধী। আওয়ামী লীগকে সরানোর জন্য বিএনপি জামায়াতকে সহযোগিতা করবে, আবার বিএনপি সহযোগিতা করবে জামায়াতকে। কিন্তু কে কাকে ইউজ করবে সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই দ্বন্দ্ব আছে। বিএনপির মতাদর্শ তো জামায়াতের মতাদর্শ না। বিএনপির মতাদর্শের মধ্যে সুবিধাবাদ আছে, লিবারেল ডেমেক্র্যাসির একটা ব্যাপার আছে। ইসলামী শাসনতন্ত্রের ব্যাপার নেই, মহিলা নেত্রীকে মেনে নেওয়ার ব্যাপার আছে; জামায়াতের ক্ষেত্রে তো এগুলো নেই। মানুষ মনে করে, আওয়ামী লীগ প্রশ্নে এদের মিলটাই বেশি, দ্বন্দ্ব কম।
এরশাদের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির অবস্থান আর আগের মতো নেই। সংসদে এই দলটির আসন কমতে কমতে এবার ১১টিতে ঠেকেছে৷ বর্তমানে জাতীয় পার্টি যে ধারার রাজনীতি করছে তাতে দলটির ভবিষ্যত কী?
আগের সংসদে জাতীয় পার্টি সরকারের অনুগতি বিরোধী দল ছিল। এবার তারা বিরোধী দল হলে তেমনই হবে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদকে হারিয়ে দিয়েই আওয়ামী লীগ এগিয়ে ছিল। এরশাদকে বলা হতো স্বৈরাচার। আর বামপন্থিরা স্লোগান দিয়েছিল- এমন একটি সরকার গঠন করো যেখানে স্বৈরাচার থাকবে না, রাজাকারও থাকবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নব্বইয়ের আন্দোলনে অন্যতম দুই পার্টনারের মধ্যে বিএনপি রাজাকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধলো আর আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলো। এই কারণে নব্বইয়ের গণআন্দোলন একবারমাত্র সাহাবুদ্দিনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে তারপর এটা আস্তে আস্তে দিশা হারিয়ে ফেলেছে।
জাতীয় পার্টি ইন্ডিপেনডেন্ট কোনো পলিটিক্যাল পার্টি হতে পারে তখনই, যখন তারা আওয়ামী লীগের যে দুঃশাসনগুলো আছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বলে যে, আমরা দক্ষিণপন্থি কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো ক্রোনি ক্যাপিটালিজম না প্রোডাকপিটভ ক্যাপিটালিজম চাই। কিন্তু সেটা তো জাতীয় পার্টির কোনো সম্ভবনা নেই। জাতীয় পার্টির গায়ে মিলিটারির গন্ধ অনেক বেশি।
বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে ,তাদের কিছুটা অস্তিত্ব রয়েছে। মনোনয়ন পেয়েও এবার হাসানুল হক ইনু ও ফজলে হোসেন বাদশা পাস করতে পারেননি। কয়েকটি বাম রাজনৈতিক দলে অন্তকোন্দল রয়েছে। এসব দলকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ণ কী?
আমি অবশ্য এদেরকে (ইনু, বাদশা) বাম ঠিক বলবো না। বামপন্থি ছিল, বামপন্থি এজেন্ডা ত্যাগ করে এরা এন্টি-বিএনপি, এন্টি-জামায়াত রাজনীতি করতে গিয়ে অন্ধভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গেছে। তার ফলে তারা আওয়ামী লীগ থেকে অটোনমাস কোনো রোল রক্ষা করতে পারেনি। সুতরাং তারা আর বাম রাজনৈতিক নয়। যদি তারা বাম রাজনীতি করতে চান, তাহলে তাদেরকে এখন যেটুকু শক্তি আছে, সেটুকু নিয়ে আওয়ামী লীগের বাইরে এসে দাঁড়াতে হবে। আর যদি তারা মনে করেন, সুযোগ-সুবিধা এবং সংসদ সদস্যপদ দরকার, নৌকা প্রতীক দরকার তাহলে তো বামপন্থি রাজনীতি সেটি রেটোরিক মাত্র।
এখনো যেসব বাম দল আওয়ামী লীগ বা বিএনপির জোটভুক্ত হয়নি তাদের এখন কী করা উচিত?
প্রথমত, জনগণের সঙ্গে তাদের বিচ্ছিন্নতা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। সেটার মূল কারণ হলো তারা কোনো কন্সটিটিয়েন্সি ডেভেলপ করেনি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক নেতার একটি কন্সটিটিউয়েন্সি থাকে, সেখানে সে নিয়মিত যায়, সেখানে মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, আলাপ-আলোচনা করে, সেখানে ভোট হলে তারা একটা ভোট পায়। এমনকি আওয়ামী লীগ, বিএনপি না করেও ভালো ভোট পায়। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র জায়গায় বামপন্থিরা জেতে। এটাই হচ্ছে প্রকৃত জনগণের ধারা। এই ধারায় বামপন্থিরা যদি নিজেদের শক্তি ডেভেলপ করতে পারে, তাহলে তাদের প্রথমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির থেকে তাদের পার্থক্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। এবং জনগণের এজেন্ডায় আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলে হবে। এই গণআন্দোলন ও নির্বাচন দুটোকে একত্রিত করে তাদের আগামী নির্বাচনের আগে প্রধান বিরোধী দল হতে হবে, এটি তাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, তবে এটি কঠিন কাজ। এটি না পারলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ টু বিএনপি, বিএনপি টু আওয়ামী লীগ এই রাজনীতি চলতে থাকবে।