বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারের সমন্বয়ে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসিত সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালকরা।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ রোববার তথ্য ভবনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তারা এই অভিমত দেন।
সভায় কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ বলেন, “গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে যা যা করা প্রয়োজন, তা করতে হবে। গণমাধ্যমের মধ্যে একটা বড় অংশ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সংবাদ ও অনুষ্ঠানে বহুমত বা ভিন্নমতের প্রতিফলন থাকা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, “বেতার কি এখনো আছে বা চলে? এটা সাধারণ শ্রোতাদের প্রশ্ন। নীতিনির্ধারক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের মানুষও এই প্রশ্ন করে থাকেন। বাংলাদেশ বেতারের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান ও ওয়ার্ল্ড নিউজ খুবই জনপ্রিয় ছিল।”
বেতারের সাবেক মহাপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন যতদিন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততদিন সরকারের নির্দেশনায় অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করতে হবে। অনেক সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সংবাদ প্রচার না করলে তারা উষ্মা প্রকাশ করতেন। সম্প্রচার কমিশন থাকলে তাহলে এই মানসিকতার পরিবর্তন হবে।”
সাবেক মহাপরিচালক শাহজাদী আঞ্জুমান আরা বলেন, “অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে অলিখিত নির্দেশনা ছিল। কেউ কেউ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীকে খুশি করার জন্য অনুষ্ঠান ও সংবাদ প্রচার করতো।”
আরেক সাবেক মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল বলেন, “সংস্কার হতে হবে; সেই সংস্কারের ফল যদি গ্রামের কৃষক পর্যন্ত পৌঁছায়, সেটা হলো আসল সংস্কার। বেতারের এখনো হাজারো শ্রোতা আছে। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে মানুষ বেতার শোনে।“
সাবেক মহাপরিচালক খাদিজা বেগমের ভাষ্য, “বেতারে সংস্কার দরকার। বেতারে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করেন। তাদের দক্ষ করে তৈরি করতে একটি নেতৃত্ব প্রয়োজন।”
সভায় বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, “সম্প্রচারের ক্ষেত্রে গত ২০ বছরে যে প্রসার হয়েছে, সে মোতাবেক আমাদের যুগোপযোগী সম্প্রচার আইন ও নীতিমালা প্রয়োজন।”
সাবেক মহাপরিচালক নাসরুল্লাহ মো. ইরফান মনে করেন, “বাংলাদেশ বেতার এখন নিউ মিডিয়াতে চলে এসেছে। বেতারে হাজারো সৃজনশীল অনুষ্ঠান আছে। স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে বেতারের সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন।“
সাবেক মহাপরিচালক রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশ বেতারের সৃষ্টিকাল থেকে এ যাবৎ কখনো কোনো গবেষণা করা হয়নি। এটি করা উচিত ছিল।”
বাংলাদেশ বেতারের সাবেক মহাপরিচালক মো. ছালাহ্ উদ্দিন বলেন, “নব্বইয়ের দশকে বেতারের অনুষ্ঠানগুলো যেভাবে মনিটরিং করা হতো, বর্তমানে সেভাবে হয় না।”
মতবিনিময় সভায় কমিশনপ্রধান ছাড়াও কমিশনের সদস্য শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, টিটু দত্ত গুপ্ত ও কামরুন্নেসা হাসান উপস্থিত ছিলেন।