বগুড়া: ফ্যাসিবাদমুক্ত বৈষম্যহীন তারুণ্যনির্ভর মানবিক বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দল-ধর্ম যার যার, এই বাংলাদেশ সবার। আমরা এমনটা বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। যেই তারুণ্যের বুকের রক্তের বিনিময়ে জাতি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে আমরা সেই তারুণ্যনির্ভর, মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। একজন শিশু জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে একজন নাগরিকের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবে। বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ সাড়ে ১৫ বছরে দেশের মানুষকে শুধু খুন, গুম উপহার দিয়েছে। যার ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। যারা অপরাধ করেছে, দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে, বৈষম্য সৃষ্টি করেছে, মানুষকে হত্যা করেছে, লাশের মিছিল তৈরি করেছে, আয়নাঘর বানিয়েছে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি শনিবার বিকালে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর শাখার আমীর অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর ও জেলা শাখা আয়োজিত বিশাল সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ডা. শফিক বলেন, অন্যায়ভাবে জামায়াতের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি এসব অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা যাদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেসব শহিদ ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা এখন আমাদের প্রথম এবং নৈতিক দায়িত্ব। এজন্য দল-মত ধর্ম নির্বিশেষে সকল শহিদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আমরা। এখন আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে।
জামায়াত আমির আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে আমাদের দু’জন আমীরে জামায়াতসহ ১২ জন শীর্ষ নেতাকে শহিদ করেছে। অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে আমাদের দলের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নিয়েছে। বুলডোজার দিয়ে আমাদের ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। গুম-খুন হামলা-মামলায় ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে ও আয়নাঘরে বন্দি করেছে। শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী লীগ জুলুম অত্যাচারের সীমা লঙ্ঘন করতে গিয়ে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে অসহায় কর্মী-সমর্থকদের বিপদে ফেলে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
ডা. শফিক বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদের দোসর পলাতক বাহিনী যেখানেই থাকুক না কেনো তাদের ধরে এনে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এমন শাস্তি দেওয়া হবে। যাতে বাংলার মাটিতে আর কোনো দিন কোনো ফ্যাসিস্টের জন্ম না হয়। বাংলার জনগণ আর কোনো ফ্যাসিবাদকে ক্ষমতায় বসতে দেবে না।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী। আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী জয়পুরহাট জেলা শাখার আমীর ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ, সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা শাহীনুর আলম।
বগুড়া শহর সেক্রেটারি আ. স. ম আব্দুল মালেক, পূর্ব জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মানসুরুর রহমান ও পশ্চিম জেলা সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম রাজুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বগুড়া পশ্চিম জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার, পূর্ব জেলা আমীর অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, শহর নায়েবে আমীর মাওলানা আলমগীর হোসাইন, পূর্ব জেলার নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল বাসেদ, পশ্চিম জেলার নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল মতিন, ইসলামী ছাত্রশিবির বগুড়া শহর শাখার সভাপতি রেজওয়ানুল ইসলাম, বগুড়া পশ্চিম জেলা সভাপতি সাইয়্যেদ কুতুব সাব্বির, বগুড়া পূর্ব জেলা সভাপতি জোবায়ের আহম্মেদ প্রমুখ। সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইঞ্জি. শামসুল হক।
এর আগে সকালে শহর জামায়াতের নব-নির্বাচিত আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াত আমীর। তিনি উপস্থিত চার হাজার ৪৭ জন রুকনের (সদস্য) উপস্থিতিতে গোপন ব্যালটের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বগুড়া শহর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল এবং বগুড়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকারকে সংগঠনের সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী শপথ প্রদান করেন।