ঢাকা: রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করার বিষয়ে বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে দলটি।
শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আটজন প্রতিনিধি বৈঠকে অংশ নেন। তারা হলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য আরিফুল ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি দৈনিককে বলেন, বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের বক্তব্য তারা শুনেছেন, কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। আগামী দু–এক দিনের মধ্যে তাদের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আজকের বৈঠকে তারা (বিএনপি নেতারা) আমাদের কাছ থেকে বক্তব্য জেনেছেন। এ বিষয়ে নিজেদের ফোরামে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন তারা। খুবই জেন্টল একটা ওয়েতে (আন্তরিক পরিবেশে) আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আশা করি, তারা সেই জায়গাকে নিশ্চয়ই স্পষ্ট করবেন।”
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানোর দাবির পক্ষে ঐকমত্য তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গত দুই দিনে দুই দফা বৈঠক করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
গত শুক্রবার রাতে ওই সংগঠন দুটির নেতারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও ছিলেন। এরপর গতকাল বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। তারা গতকাল বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এর আগে গত শুক্রবার জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তারা। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের তাদের দাবির প্রতি নীতিগত সমর্থন দিয়েছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। তবে সিদ্ধান্ত জানাতে অপেক্ষায় রাখল বিএনপি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি তোলার পর গত ২৩ অক্টোবর সালাহ উদ্দিন আহমদসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে এ মুহূর্তে কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না করার কথা বলেছিলেন। দলটি মনে করে, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা হলে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট দেখা দেবে, সেটি বিএনপি চায় না।
ছাত্রনেতারা যা বললেন
বিএনপির সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও হাসনাত আবদুল্লাহ। রাষ্ট্রপতির অপসারণ ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বিলোপের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে দুই দিন ধরে দেশের পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা আলাপ করছেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ জানান,“বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, প্রক্লেমেশন অব সেকেন্ড রিপাবলিক (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের ঘোষণাপত্র) কীভাবে ঘোষণা করা যায়, সেটি নিয়ে কথা বলেছি। দ্বিতীয়ত, চুপ্পুর (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ডাকনাম) অপসারণ খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি ও সংকট এড়িয়ে কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে কথা বলেছি। তৃতীয়ত, জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে সরকারের ফাংশনিংয়ের (কার্যক্রম) ধারাবাহিকতা কীভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়েও কথা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বিএনপির পাশাপাশি আমরা জামায়াতের সঙ্গে বসেছিলাম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গেও আমরা এবিষয় নিয়ে কথা বলেছি। জামায়াতের জায়গা থেকে তারা একমত প্রকাশ করেছে। তারা বলেছেন, ইতিমধ্যে তাদের জায়গা থেকে তারা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। নৈতিক জায়গা থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের তার পদে থাকার কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্যতা নেই।”
হাসনাত বলেন, “আমরা ২৩ তারিখে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলাম যে, সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল, যারা গণঅভ্যুত্থানে আমাদের নেতৃত্বে এসে, আমাদের ফ্যাসিবাদ বিলোপের প্রাথমিক ধাপ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন আমরা ঘটিয়েছি। এখন এই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ বিলোপের ক্ষেত্রে আমাদের যে আরেকটি বাধা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ এবং আমাদের যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত-এসব বিষয়ে যারা আমাদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে গত দু’দিন ধরে আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ করছি। ”
ইসলামী আন্দোলন রাষ্ট্রপতি অপসারণের পক্ষে
রাষ্ট্রপতির পদ থেকে মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ বা পদত্যাগের পক্ষে ইতিমধ্যেই অবস্থান প্রকাশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শনিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও দলটি আগের অবস্থানই প্রকাশ করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহসহ পাঁচজন পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, তারা রোববার গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট ও গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ করবে। তাদের রাজনৈতিক সংলাপ অব্যাহত থাকবে।