মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
 
রাজধানী
‘বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে’





নিজস্ব প্রতিবেদক
Sunday, 6 October, 2024
12:50 AM
Update: 06.10.2024
1:58:39 AM
 @palabadalnet

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলাও দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে এক আদলহীন রাষ্ট্রে। শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে গণতন্ত্র সুরক্ষায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ছায়া সংসদটিতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। 

অনুষ্ঠানে মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে সাহসী, সততা ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, অধ্যাপক শিরিনা বীথি, সাংবাদিক রাসেল আহমেদ, সাংবাদিক মো. হুমায়ুন কবীর ও সাংবাদিক আমেনা আক্তার হীরা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

ছায়া সংসদের বিতর্ক চলাকালীন সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের পর জাতীয় নির্বাচন গণতন্ত্রকে সুসংহত করার পক্ষে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা। একেকজন বক্তা চার মিনিটের বক্তব্যে সবার আগে রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশন করা হয়েছে। এই সংস্কারের মধ্যদিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়া হবে। তারপরেই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়া হবে। সরকারি দলের বক্তব্যে রাষ্ট্র সংস্কার না হলে ফ্যাসিস্টরা আবারো ফিরে আসবে বলে বক্তব্যে উঠে আসে। অপরদিকে  বিরোধিতা করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা। তারাও সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান। তারা সংসদে সরকারি দলকে প্রশ্ন করেন, কতোদিনে এই সংস্কার করা হবে। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা যেকোনো সরকার ক্ষমতায় গেলে তা করতে পারবে বলে ছায়া সংসদের বিতর্কে উঠে আসে। সরকারি দলে শেকৃবি’র পক্ষে সংসদীয় নেতা হিসেবে বক্তব্য রাখেন মরিয়ম জামিলা মারিয়া। তার সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফাহমিদা হাসান দিশা ও সংসদ সদস্য ছিলেন সাইফ আল সুফিয়ান। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য দেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাফায়াতুর রহমান। এ ছাড়া বিরোধীদলীয় উপনেতা ছিলেন আসিফ আলমগীর ও বিরোধী সংসদ সদস্য ছিলেন শাহীন আলম। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মতিউর রহমান চৌধুরী এক প্রশ্নের জবাবে দেশে সেনা শাসন আসার শঙ্কা নেই বলে জানান। তিনি বলেন, এখনকার যুগে সেনা শাসন সম্ভব নয়। সেনা শাসন হলে উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা বন্ধ করে দেবে। আমেরিকা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেনা শাসনের বিপক্ষে। তবে বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। আর বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে আমরা অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হবো।
তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন তিউনিশিয়া ও মিশরে বিপ্লব হয়েছিল। তিউনিশিয়াতে এসেছে একটা দুর্বল গণতন্ত্র। আর মিশরে সেনাশাসন এসেছে। বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ হতাশ হয়েছে। আমাদের এখানে সেই আশঙ্কা যে নেই, তা কিন্তু বলা যাবে না। এ কারণে আমাদের সম্মিলিতভাবে রুখতে হবে। স্লোগান দিলেই সংস্কার হবে না। আর এই সরকারও শক্তিশালী হবে না। আপনি দেখেন, প্রতিদিন দাবি জানানো হচ্ছে। আগে এই দাবিগুলো কোথায় ছিল? 

ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূসকে আমরা পেয়েছি। প্রফেসর ইউনূসের সমস্যাটা কি? অবশ্যই সমস্যা আছে। একদিকে  শান্তিতে তিনি নোবেল বিজয়ী। তিনি মানুষের উপর কঠোর হতে পারেন না। শেখ হাসিনার মতো গুলি চালাতে পারেন না। তার পুরস্কার তাকে বাধা দিচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে তিনি সরকার প্রধান। এই দুইয়ের কন্ট্রাডিকশনের কারণে সরকার দুর্বল।  
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সংবিধানকে পুনর্লিখন না করে সংস্কার করা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, সংবিধান পুনর্লিখন নয়, সংস্কার করা যেতে পারে। পুনর্লিখন করলে বিপদ হবে। 

মানবজমিন প্রধান সম্পাদক আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্টরা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি রয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রাপ্তিতেও সংশয় তৈরি হবে। 

দেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে এখন। এই ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে আমি আগেই বলেছিলাম রাষ্ট্র গঠনের যে মূল চেতনা এই চেতনা যদি কোনো কারণে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তাহলে আমরা সবাই অপরাধী হবো। আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। আর জবাবদিহিতা নাই বলেই আজকে বাংলাদেশের এই সংকট। 

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আজকের এই ছায়া সংসদে যে বিতর্ক হলো এই বিতর্ক থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি অনেক কিছু শিখেছি। আপনারা রাজনীতিবিদদের সামনে এই কথাগুলো যদি বলতে পারতেন, তাহলে তারা বুঝতেন কোথায় ভুল করছেন। 

পালাবদল/এসএ


  সর্বশেষ খবর  
  সবচেয়ে বেশি পঠিত  
  এই বিভাগের আরো খবর  


Copyright © 2024
All rights reserved
সম্পাদক : সরদার ফরিদ আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক : জিয়াউর রহমান নাজিম
ফোন : +৮৮-০১৮৫২-০২১৫৩২, ই-মেইল : [email protected]