কোমল আতর
আর তুমি লিখিও না নাম-
বসন্তের বুনিয়া ঘর ডালে-ডালে বেঁধেছো বাসা
খরকুটা তুচ্ছ ভালোবাসা, কোথায় বুনিয়াছো ধাম।
তুমি আর লিখিও না নাম।
নাম লিখে রেখে গেলে নামের অন্তরালে
চোখের পলক থেকে নেমে দূরে দাঁড়ালে
দাঁড়ালে অচেনা হয়ে। নিলে ঠাঁই তুমি গভীর
নিরলে, যেমন আঁধারে যায় কোকিল হারিয়ে-
বসন্ত-হরফে তার নাম লিখে দিয়ে।
রেখেছো তোমার নাম বেনামে
কঠিন করেছে তোমায় নামের বানানে
পাঁজড়-জুড়ে লিখে গেছো জীবনটা গোপন জবানে।
কবে তুমি ছিলে সহবতী, কতো দিন পরে এসে
আজ তুমি গন্ধ ভাসাও, দূর থেকে ছুঁয়ে
দিয়ে যাও, দাও ভালোবাসা অবিরাম-
বাতাসের গায়ে রেখা টেনে-টেনে লিখে যাও নাম।
বানস্পত্য বৃক্ষে তুলেছো ঘর. ফল তুমি ঠিকই পাবে
পাবে না কুসুম কোনো, কুসুমের কোমল আদর।
নত হয়ে দাঁড়াও
নত হয়ে দাঁড়াও, বাঁধিয়ে রাখি চন্দন-ফ্রেমে।
তাকালে আমার দিকে চিনে ফেলতে পারি-
মনে হতে পারে তুমি যেন কে, কোথাযও
দেখেছি , তোমাকে! চুয়া চন্দন- ঘ্রাণের চৌকাঠে
অবরুদ্ধ থাকো তুমি জন্ম-জীবন ধরে
নিষ্প্রাণ ছবির মতোন।
কৈশোরে দেখেছি তোমাকে প্রথম, আজো দেখি
দেখি কিভাবে আমার সাথে বড়ো হয়ে
উঠেছ তুমিও । অজর যৌবনা, কোনো ছবি নও
তবু ছবির মতন, আসো-যাও যখন-তখন
কতো বার কতো রূপ ধরে, আমার ঘরে।
তুমি একজনই, তবু তুমি শত-শত জন-
আমাকে বিভক্ত করে যে-দুজন আমি
তুমি তাদেরই মতন।
কখনো মৃত্যু নেই তোমার, আমার আছে -
একদিন আমাকে যাবে না আর দেখা। আমার
পরিধি-জুড়ে এই পৃথিবীতে তুমি শুধু রয়ে যাবে একা।
নত হয়ে দাঁড়াও, বাঁধিয়ে রাখবো তোমায় চন্দন-ফ্রেমে।
তোমার মতো এমন
জগৎ-জুড়ে একটি আলো
কখনো সে দেখতে কালো
ক’জন বলো সেই কালোতে মরে-
সকলেই তো বাসে ভালো
তোমার মতো এমন করে ক’জন বাসতে পারে
মনের বসত পরের ঘরে
পর রয়েছে হৃদয়-জুড়ে
কতো রকম ভাবনা তারে মুগ্ধ করে
কতো জনম ধরে-
ক’জন বলো তোমার মতো এমন ভাবতে পারে।
মনের ব্যথা গোপন রেখে কথার আড়ালে
তুমি থাকো গভীর তলে।
কাঁদবে যখন একলা তো নয় সবকে কাঁদালে
তুমি লবণ-জলে সকল ভাসালে-
এমন করে ভিজতে পারে ক’জন চোখের জলে।
কত রকম কণ্ঠস্বরে, শব্দ ভেঙে শব্দ গড়ে
কতো জনেই বলে কথা সুরে-বেসুরে-
তোমার মতো এমন কথা ক’জন বলতে পারে!