ভারতের মূলধারার মিডিয়ার ৭০ শতাংশের বেশি হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সমর্থক। দলটি নানা কায়দা-কানুন করে মূলধারার অনেকগুলো জনপ্রিয় মিডিয়া হাউস দখল করে নিয়েছে। এসব মিডিয়ায় ভারতে ‘গোদি মিডিয়া’ হিসেবে পরিচিত। এদের কাজ হলো হিন্দু-মুসলমান ইস্যুকে সামনে এনে উত্তেজনা তৈরি করা এবং মুসলমানদেরকে কোণঠাসা করা, বিতর্কিত করা। দিল্লিতে বিজেপি সরকার ক্ষমতা আসার পর থেকেই এই সিলসিলা চালু হয়েছে।
ভারতের এখন অবস্থা হলো সেখানে মোদি সরকারের কোনো সমালোচনা করা যাবে না। যে মিডিয়া বা সাংবাদিক মোদি সরকারের সমালোচনা করে তাকে নানা হেনস্থার শিকার হতে হয়। যেতে হয় কারাগারে। এমনকি বিদেশি মিডিয়ার যেসব সাংবাদিক দিল্লিতে কাজ করেন তারাও নানা সময়ে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। সবশেষ শিকার হলেন ফরাসি সাংবাদিক ভানেসা দুনাক।
ভানেসা দুনাক ভারত ছাড়তে বাধ্য হলেন। শুক্রবার চলে যাওয়ার আগে বিবৃতি দিয়েছেন তিনি, যা শুরুই হয়েছে, “চোখে পানি নিয়ে কথাগুলো লিখছি” বলে। ভানেসা লিখেছেন, “আজ আমি ভারত ছেড়ে যাচ্ছি, যে দেশে পঁচিশ বছর আগে ছাত্রী হয়ে এসেছিলাম। যেখানে ২৩ বছর সাংবাদিকতা করেছি। যে জায়গায় আমার বিয়ে হয়েছে। সন্তানকে বড় করেছি। যাকে আমি নিজের ঘর ভাবি।”
নিজের ইচ্ছায় চলে যাচ্ছেন না, লিখেছেন ভানেসা। তার কথায়, “চাপ দিয়ে আমাকে দেশছাড়া করাচ্ছে ভারত সরকার।”
ফ্রান্স, সুইডেন এবং বেলজিয়ামের বিভিন্ন সংবাদপত্রের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি ভানেসা। দিল্লি থেকে কাজ করতেন। বিবাহসূত্রে ওভারসিজ় সিটিজেন অব ইন্ডিয়া (ওসিআই) কার্ডধারী ভানেসা লিখেছেন, “গত মাসে আমাকে নোটিস দিয়ে বলা হয়, আমি এবং আমার প্রতিবেদনগুলো ‘বিদ্বেষপূর্ণ’, ‘ভারতের একতা এবং সার্বভৌমত্বের’ জন্য ক্ষতিকর। কেন ওসিআই কার্ড বাতিল হবে না, তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। দাবি করা হয়, আমার প্রতিবেদন শান্তি আর শৃঙ্খলাভঙ্গে উস্কানি দিতে পারে।”
প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির অনুষ্ঠানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রধান অতিথি ছিলেন। সেই সময় দু’দেশের প্রতিনিধি স্তরের আলোচনায় উঠেছিল ভানেসাকে দেওয়া নোটিসের বিষয়টি। বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র বিনয় কোয়াত্রা দাবি করেছিলেন, ভারত যে ভাবে বিষয়টিকে বিধিসম্মত দৃষ্টি থেকে যুক্তিকাঠামোয় সাজিয়েছে, তার ‘প্রশংসা’ করেছে ফ্রান্স।
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর ২০২৩ সালের রিপোর্টে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতার প্রশ্নে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত ছিল ১৬১ নম্বরে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে যা সর্বনিম্ন। - সংবাদ সংস্থা