ঢাকা: দুই জাপানি শিশু নাকানো জেসমিন মালিকা ও নাকানো লায়লা লিনা কার জিম্মায় থাকবে সে বিষয়ে রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে বলা হয়, জেসমিন মালিকা তাদের মা জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর সঙ্গে এবং নাকানো লায়লা লিনা তাদের বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের সঙ্গে থাকবেন।
এ ছাড়া, তাদের ছোট মেয়ে সোনিয়াও মায়ের সঙ্গে থাকবে।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, প্রথম ও তৃতীয় মেয়েকে নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো বাংলাদেশে বা অন্য যেকোনো দেশে বসবাস করতে পারবেন। তবে তাদের বাবা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। একইভাবে দ্বিতীয় মেয়ে লাইলা লিনা তাদের বাবা বাংলাদেশি নাগরিক ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন। তবে তাদের মা দ্বিতীয় মেয়ের সঙ্গে দেখার সুযোগ পাবেন।
এ বিষয়ে আপিল আংশিক মঞ্জুর করে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার লাভলী। নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ শিশুকে জাপান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তাদের বাবা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফ।
এরিকো এক রিট পিটিশনে বলেন, ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান জাপানের একটি আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের নোটিশ জমা দেন, কিন্তু শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে ওই আদালতে হাজির হননি।
এরিকোর আবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ইমরান টোকিওর স্কুল থেকে মেয়েদের তুলে নিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন।
টোকিওভিত্তিক ৪৬ বছর বয়সী চিকিৎসক এরিকো ২০২১ সালের ১৮ জুলাই বাংলাদেশে আসেন এবং ৫৮ বছর বয়সী ইমরানের ওপর নির্দেশনা চেয়ে ১৯ আগস্ট উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন।
তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, ইমরান তার মেয়েদের নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন।
পিটিশনে এরিকো বলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই তিনি ও ইমরান বিয়ে করেন।
রায়ে হতাশ জাপানি মা
জাপানি তিন শিশুর মধ্যে দুজন তার মা ও একজন বাবার কাছে থাকবে- হাইকোর্টের দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন জাপানি মা নাকানো এরিকো। রায় ঘোষণার পর তিন মেয়েকে নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাপানি মা।
জাপানি মা সাংবাদিকদের বলেন, ~আমি এতে অত্যন্ত হতাশ। আজকের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা সুপ্রিমকোর্টে আপিল করব, শুধু শিশুদের মঙ্গলের জন্য। এটি পেরেন্টাল শিশু অপহরণ, এটি শিশু নির্যাতন। শুধু তাই নয়, এটি পারিবারিক নির্যাতন।”
মেয়েদের জন্য গত তিন বছর ধরে জাপানে চাকরি রেখে বাংলাদেশে থাকার বিষয় তুলে ধরে নাকানো এরিকো বলেন, “আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। আমি জাপানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করতাম। কিন্তু আমি আমার চাকরি হারিয়েছি। শুধু আমার মেয়েদের জন্য। এমনকি আমার আয় দিয়ে জীবনযাপন করতাম। ইমরান কখনোই অধিকারের জায়গা থেকে মেয়েদের জন্য কোনো একটি পেনিও (অর্থ) দেয়নি। আমি মেয়েদের পড়াশোনা, আবাসন, খাদ্যসহ সব ব্যয়ভার বহন করতাম, আমার নিজের কথা ভুলে গিয়ে। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তা করতাম না। কিন্তু, এটা কি বাংলাদেশে স্বাভাবিক? আপনাদেরও (সাংবাদিক) সন্তান আছে। আপনারা কি সন্তানের পড়াশোনার খরচ দেন না? নাকি সন্তানের মা দেন! কিন্তু ইমরান কোনো খরচই দিত না।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি এখানে কোনো ধরনের কাজ ছাড়া তিন বছর ধরে রয়েছি। এসব কী! এটা বাংলাদেশ থেকে কী ধরনের ট্রিটমেন্ট (আতিথেয়তা/আচরণ)। আমি কাজকে ভালোবাসি।”