সেই কবে একদিন কৈশর-প্রান্তে নাকি তারুণ্যের প্রারম্ভে শুরু হয়েছিল কবিতা লেখা। ঠিক কী ভেবে এবং কেন-যে সেদিন কবিতায় ঝোকা হলো তা আজ বিস্মৃতির বিষয়। তারপর দেখতে দেখতে নানামুখী টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে পার হয়ে গেলো চারটি দশক। এই লম্বা সময়ের ব্যাপ্তিতে স্বপ্নের ভূমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল অনেক ফলালো বটে, কিন্তু সেই ফসল ঘরে তোলা একেবারেই সম্ভব হলো না। পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাপিয়ে নাম করে ফেলার কিংবা নিজের লেখকপরিচয় চারদিকে রটিয়ে দেওয়ার যে-একটা রেওয়াজ চালু আছে, তার চর্চা করাও এই ব্যক্তিতৃপীড়িত শব্দ-সৈনিকের ধাতে নেই। এ-ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাড়ালো মেজাজ আর অনীহা আর বিরক্তি এবং অবহেলাও, এ-জন্য কম দায়ি নয়। এই রকম প্রতিকূলতার মধ্যেই অনেক বিলম্ব করে হলেও দীর্ঘ-তষিত জমিনে বৃষ্টি নামার মতো করে হুমায়ন হাসানের কবিতার প্রথম বই ‘ক্রমেই দুঃসময়’ অবশেষে প্রকাশিত হয়। পরে আরো দুটি কবিতার বই ‘আয়নায় আত্মগোপন’এবং ‘কাচের কুসুম’ প্রকাশিত হয়। ব্যক্তি-জীবন থেকে শুরু করে বিশ্বময় পরিব্যাপ্ত এবং বৃত্তবদ্ধ আর্থ-রাজনৈতিক সঙ্কটের শাব্দিক চিত্রায়নই প্রকাশিত গ্রন্থের কবিতাগুলির মুখ্য বৈশিষ্ট্য। ক্রমেই দুঃসময়’ কোষকাব্যের সব কবিতায় বিষয়-বৈচিত্র্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইচ্ছা করেই এই বৃত্তটি ভাঙা হয়নি। কে না-জানে, আজকের এই অনিশ্চিত ও দুর্বিষহ দিনে সর্বত্র ঘনীভূত আর্থ-রাজনৈতিক সঙ্কট কতো বেশি তাড়িত করছে জীবনকে। এছাড়া প্রেম এবং আধ্যাত্ব-চেতনা তার কবিতার বিষয় হিসেবে এসেছে।