এক. সত্যিকারের ভুল করার জন্য নিজের উপর এতটা কঠিন হবেন না। মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান আপনার কী ভুল হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এটি পরিকল্পনা করেছিলেন। শিক্ষাটি প্রয়োজনীয় ছিল। এটা আপনার জন্য তার পরিকল্পনার অংশ। ভুলটি সংশোধন করুন এবং একই ভুল আবার না করার জন্য আপনার চেষ্টা যথাসাধ্য করুন।
দুই. আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনার সেরা দিনগুলি সামনে। ঠিক আপনার একেবারে সামনে। আপনাকে চলা অব্যাহত রাখতে হবে। আপনি কোথায় ছিলেন তা নিয়ে কিছু মনে করবেন না। যদি এটিকে জাহান্নামের গর্তের মতো মনে হয়, তবু কিছু মনে করবেন না। যা সামনে আসবে সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশক্তিমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের ক্ষমতার বাইরে কিছু দিয়ে পরীক্ষা করবেন না।
তিন. যারা বেশি কথা বলে তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকুন। তারা অনেক কিছু বলে কিন্তু তারা যা বলছে তার খুব কম মূল্যই রয়েছে। এর সবই গুজব, গল্প ও শোনা কথা এবং তারা এতে সাফল্য পেতে চায়। আপনি যদি এই ধরনের লোকের সঙ্গে থাকেন, তাদের কথার বিষয়বস্তুর দিকে মনোযোগ দিন, তারা আসলে কী বলছে?
মরক্কোর ভূমিকম্প
চার. মরক্কোতে আঘাত হানা বিধ্বংসী ভূমিকম্পে আমরা মর্মাহত। সর্বশক্তিমান সবার জন্য পরিস্থিতি সহজ করুন। ভূমিকম্পের পরবর্তী আঘাত থেকে তাদের রক্ষা করুন।
পূনশ্চ
এক. মনে রাখবেন, আপনার জীবনে কেউই নিখুঁত নয়। তাদের নিখুঁতভাবে পাবার আশা করা বন্ধ করুন। এখানে এমন কোনো জিনিস নেই যা নিখুঁ। এই ধরনের মানুষের অস্তিত্ব নেই। আপনি যদি পরিপূর্ণতা আশা করেন তবে আপনি নিজেকে এক বিশাল হতাশার জন্য তৈরি করছেন। আমরা সবাই মানুষ এবং আমরা ভুল করি। এটি গ্রহণ করুন এবং আপনি তখন অনেক সুখী হবেন।
দুই. পৃথিবী আপনাকে কখনো সন্তুষ্ট হতে শেখাবে না। সবসময় মনে হবে আরো চাই- এটা শয়তানের সবচেয়ে বড় ফাঁদগুলোর একটি। এটি এতই বিস্তৃত যে লোকেরা তাদের কাছে যা আছে তার প্রশংসা করতে ভুলে যায়। সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্যেও অতৃপ্ত থাকে। তারা যা আছে তা উপলব্ধি করার আগে পরবর্তী জিনিসের কথা চিন্তা করে।
তিন. উদারভাবে দিন। এটি কেবল অর্থ সম্পর্কে প্রযোজ্য নয়। আপনার সময়, একটু হাসি, যার সাথেই আপনি সাক্ষাৎ করছেন তার প্রতি দয়ার হাত বাড়িয়ে দিন। দয়া এবং করুণায় ভরা মনোভাব বজায় রাখুন। মানুষের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু প্রত্যাশা না করে এসব করুন। সর্বশক্তিমান পর্যাপ্ত কৃপা করবেন আপনাকে।
চার. আপনি যখন কোনো কিছুতে ব্যর্থ হন, মনে রাখবেন এটি সর্বশক্তিমানের পরীক্ষা। এটি আপনাকে থামিয়ে দেবে এমনটা হতে দেবেন না। আপনি যদি একবার সফল না হন তবে আবার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে বড় ভুলটি হলো হাল ছেড়ে দেয়া। আপনি কতটা চেষ্টা করছেন, সত্যিই আপনি এটি পেতে কতটা চেয়েছেন, তা দেখার জন্য সর্বশক্তিমান নজর রাখছেন। প্রতিটি প্রতিবন্ধকতায় উত্তরণও রয়েছে।
পাঁচ. যে অবস্থার মধ্য দিয়েই যাক না কেন, যারা জীবনের সমস্যাগুলি ভুলে যেতে এবং বিশ্বকে দেখাতে হাসি মুখে থাকতে যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। ইতিবাচক থাকতে সক্ষম হওয়ার জন্য এই ধরনের লোকেরা কতটা যে শক্তিমান সে বিষয়টির প্রশংসা করুন। আর তাই যারা আপনার চলার পথে সামনে আসে তাদের প্রতি সদয় হোন।
ছয়. এমন কিছু ব্যক্তি আছেন যারা আপনাকে নিচে নামানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তাতে যখন তারা ব্যর্থ হয়, তখন তারা আপনার অতীতকে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। মনে রাখবেন, আপনার অতীতের কাছে কখনই বন্দী হয়ে থাকা উচিৎ নয়। আপনি অতীত থেকে আপনার পাঠ নিয়েছেন এবং আপনি সামনে এগিয়ে গেছেন। আপনার কোনো কিছুর জন্য তাদের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।
সাত. সর্বশক্তিমান, আমরা আপনার কাছে প্রার্থনা করছি যে আপনি দয়া করে আমাদের প্রার্থিত বিষয়ে সাড়া দিন। যারা অসুস্থ তাদের সবাইকে আপনি নিরাময় দান করুন। তাদের সুস্থ করুন। তাদের কষ্ট লাঘব করুন। পার্থিব হতাশার কারণে আমাদের চোখ থেকে ঝড়ে পড়া প্রতিটি অশ্রুবিন্দু যেন জান্নাতে আপনার সেরা পুরস্কারের সমতুল্য হয়।
দ্রষ্টব্য
মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে তিনি তাদের তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রোম : ৪১)
আর যখন তোমাদের সাগরে বিপদ স্পর্শ করে, তখন তিনি ছাড়া যাদের তোমরা ডাক, তারা (তোমাদের মন থেকে) হারিয়ে যায়; অতঃপর তিনি যখন তোমাদের রক্ষা করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা বিমুখ হয়ে যাও। আর মানুষ তো খুব অকৃতজ্ঞ। তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গিয়েছ যে তিনি তোমাদেরসহ স্থলের কোনো দিক ধসিয়ে দেবেন না অথবা তোমাদের ওপর শিলা বর্ষণকারী বাতাস পাঠাবেন না? তারপর তোমরা তোমাদের জন্য কোনো কর্মবিধায়ক পাবে না। অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গিয়েছ যে তিনি তোমাদের আরেকবার সমুদ্রে ফিরিয়ে নেবেন না, অতঃপর তোমাদের ওপর প্রচণ্ড বাতাস পাঠাবেন না এবং তোমাদের ডুবিয়ে দেবেন না, তোমরা কুফরি করার কারণে? তারপর তোমরা আমার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোনো সাহায্যকারী পাবে না। (সূরা বনি ইসরাইল : ৬৭-৬৯)
আর আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে। যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয় আমরা তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এই সকল লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা ও করুণা বর্ষিত হয়, আর এরাই হলো সুপথগামী। (সূরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭)