জেনারেল জর্জিও পাপাডোপুলাস (১৯১৯-১৯৯৯) বয়োজ্যেষ্ঠ ব্রিগেডিয়ার স্টাইলিয়ানোস প্যাটাকোসকে (১৯১২-২০১৬) সঙ্গে নিয়ে ১৯৬৭ সালে নিজ দেশ গ্রিসে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন। পাপাডোপুলাস হলেন প্রধানমন্ত্রী আর প্যাটাকোস উপপ্রধানমন্ত্রী। দুজনেই তখন রাজধানীতে একসঙ্গে অবস্থান করছেন। এ সময় গভর্নর দেশের সবচেয়ে বড় কারাগারে করিডালোসে বিরাজমান অস্থিতিশীল অবস্থা তাদের জানাতে এলেন।
কয়েদিদের অনেক ক্ষোভ জমে আছে। দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা অনশন ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
পাপাডোপুলাস জিজ্ঞেস করলেন, তাদের প্রধান দাবি কী? গভর্নর বললেন, তারা প্রতি সপ্তাহে এক দিন যৌন তাড়না নিবৃত্তির জন্য স্ত্রীদের কাছে পেতে চায়।
পাপাডোপুলাস বললেন, বলে দাও তাদের দাবি মঞ্জুর। তার নমনীয়তায় প্যাটাকোস অবাক ও ক্ষুব্ধ হলেন।
এক সপ্তাহ পর গভর্নর আবার এসে বললেন, অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, কয়েদিরা তাদের সেলে একটি করে টেলিভিশন চাচ্ছে। দাবি না মানলে তারা ধর্মঘটে যাবে।পাপাডোপুলাস রাজি হয়ে গেলেন এবং টেলিভিশন সরবরাহের নির্দেশ দিলেন। উপপ্রধানমন্ত্রী প্যাটাকোস থ হয়ে রইলেন। এসব কি মেনে নেবার মতো আবদার?
এক সপ্তাহ পর গভর্নর এসে বললেন, আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছে, কয়েদিরা ডেনমার্কের মতো সাপ্তাহান্তের জন্য কারামুক্তি চায়। বাইরে উইকএন্ড কাটিয়ে আবার জেলে ঢুকবে। পাপাডোপুলাস সম্মতি দিলেন। কিন্তু প্যাটাকোস আর নীরব থাকতে রাজি নন। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, কী আশ্চর্য! কয়েদিদের প্রতি এমন সদয় হবার মানে কী? আমরা সদয় হব স্কুলের প্রতি, কারাগারের প্রতি নয়।
পাপাডোপুলাস বললেন, মাথা গরম করবেন না, এখান থেকে আমরা স্কুলে ফিরব না। বাস্তবে তা-ই ঘটেছে। ১৯৭৩ সালে অভ্যুত্থানে পাপাডোপুলাস ক্ষমতাচ্যুত হন, দুজনই গ্রেফতার হন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দুজনের মৃত্যুদণ্ড হয়। পরে আপিল আদালত মৃত্যুদণ্ড হ্রাস করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। জেনারেল পাপাডোপুলাস কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন। কুড়ি বছর কারাবাসের পর প্যাটাকোসকে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট রেগান
যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট সাবেক হলিউড অভিনেতা রিপাবলিকান দলের রোনাল্ড উইলসন রেগান। জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯১১, ইলিনয়; মৃত্যু ৫ জুন ২০০৪ লস অ্যাঞ্জেলেস। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ দুই টার্ম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ৩০ মার্চ ১৯৮১ আততায়ীর গুলিতে মারাত্মক আহত হয়েও বেঁচে যান। আর ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন (১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯-৪ মার্চ ১৮৬৫) ফোর্ড থিয়েটারে নাটক দেখার সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
প্রেসিডেন্ট রেগান মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন, অস্থির বোধ করছেন, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তাকে সন্দিহান করে তুলেছে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে তিনি রাতের বেলায় রাজধানীর রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করলেন। তিনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন ওয়াশিংটন মেমোরিয়ালের সামনে। তিনি চেঁচিয়ে বললেন, মান্যবর জর্জ ওয়াশিংটন, আমি এখন কী করব? সৌধের ভেতর থেকে গভীর স্বর ধ্বনিত হলো, রোনাল্ড রেগান তুমি কংগ্রেসের কাছে যাও।
আরও কিছুদূর এগিয়ে তিনি দেখলেন, জেফাবসন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মান্যবর টমাস জেফারেসন, আমি এখন কী করব? গভীর স্বর শোনা গেল, রোনাল্ড রেগান, তুমি জনগণের কাছে যাও।
তবুও রেগানের অস্থিরতা কাটল না। হাঁটতে হাঁটতে তিনি লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালেন। আবারও একই প্রশ্ন করলেন, মান্যবর আব্রাহাম লিঙ্কন, আমি এখন কী করব? ঠিক তখন স্মৃতিসৌধের গভীর তলদেশ থেকে ধ্বনিত হলো, রোনাল্ড রেগান, তুমি এখনই থিয়েটারে চলে যাও।
জোসেফ স্ট্যালিন
তখন জোসেফ স্ট্যালিনের আমল। বিশাল রাষ্ট্র ইউনাইটেড সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক। স্ট্যালিনের রাজত্বে একজন মানুষ মস্কোর রাস্তায় ছুটছে আর চিৎকার করছে: 'কেবল একজন মানুষের জন্য গোটা পৃথিবী আজ ভুগছে। কেবল একজন মানুষের জন্য।'
তাকে গ্রেফতার করে কেজিবির জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হলো। টেনেহেঁচড়ে তাকে নেওয়া হলো ইন্টারগেশন সেলে।
প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রাস্তায় চিৎকার করতে করতে কী বলছিলে? তার জবাব: আমি বলছিলাম কেবল একজন মানুষের জন্য গোটা পৃথিবী আজ ভুগছে। কেবল একজন মানুষের জন্য।
প্রশ্নকর্তা বললেন, কিন্তু কে সেই লোক, আপনি যার কথা বলতে চাইছেন?
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নিজের পরিণতি বুঝতে বাকি নেই। তিনি বললেন, কী বলতে চাচ্ছেন, কার কথা বলছি মানে?
হ্যাঁ, কার কথা?
কেন, এটা জিজ্ঞেস করার কী হলো, অবশ্যই হিটলার।
প্রশ্নকর্তার মুখে হাসি ফুটল, বললেন, ওহ তাই নাকি? বেশ আপনি মুক্ত এবং চলে যেতে পারেন। সেই মানুষটি সেলের দরজা পর্যন্ত গিয়ে হঠাৎ থেমে গেলেন এবং ফিরে এসে প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, আপনার মনে কে আছে, বলুন তো! জোসেফ স্ট্যালিন।
এই রুশকাহিনির একটি ইতালীয় ভার্সন রয়েছে
একজন নারী রোমের একটি বাজারে এলেন। পাস্তা ও ফলের দোকানে বড় লাইন। রুটি নেই, পনির নেই, সাবান নেই। তিনি চিৎকার করে বললেন, সবকিছু তার দোষ, এই বদমাশটার জন্য আজ এ অবস্থা। গোয়েন্দা পুলিশ তার দিকে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে, সিনোরা আপনি কার কথা বলছেন?
নারী আতঙ্কিত হলেও তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে বললেন, কে আবার? আমার স্বামী।
গোয়েন্দা পুলিশ থ হয়ে গেল, তার শরীর বিবর্ণ। দ্রুত এই নারীকে স্যালুট দিয়ে পুলিশ বলল, আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি আপনাকে চিনতে পারিনি ডোনা র্যাচেল। ডোনা র্যাচেল বেনিত্তো মুসোলিনির স্ত্রী।
রেজা শাহ পাহলভি
রেজা শাহ পাহলভি ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ ইরানের সর্বময় ক্ষমতাধর বাদশাহ হিসেবে অভিষিক্ত হন। ইসলামি বিপ্লব ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তার জন্ম ২৬ অক্টোবর ১৯১৯ তেহরানে, মৃত্যু নির্বাসিত জীবনে কায়রোতে ১৭ জুলাই ১৯৮০।
শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে ইরানের শাহ কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ছিলেন। অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলেন নরম হাতের শাসনে তাদের নিরস্ত্র করা যাবে না। শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। আর সে জন্য দরকার কয়েক ডজন বাড়তি ট্যাঙ্ক।
বৃটেনের কভেন্ট্রিতে অস্ত্র কারখানা পরিদর্শনে এলেন। বড় খদ্দের পেয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়ে শাহকে তার সম্মেলনকক্ষে নিয়ে এলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রমিকদের লাঞ্চ টাইম শুরু হতে যাচ্ছে। লাঞ্চ টাইম হুটার বাজতে শুরু করল। আওয়াজে উৎকণ্ঠিত শাহ চেয়ার ছেড়ে জানালার কাছে এসে দেখলেন, হাতের হাতিয়ার রেখে হাজার হাজার শ্রমিক কারখানার বাইরে ছুটে যাচ্ছে। আতঙ্কিত শাহ বললেন, আমাদের এখনি পালাতে হবে। শ্রমিকেরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। চলুন তাড়াতাড়ি আপনাদের একটা ট্যাঙ্কে চড়ে দ্রুত কোনো নিরাপদ স্থানে চলে যাই।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে আশ্বস্ত করলেন, রয়াল হাইনেস, এখানে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এমনটা প্রতিদিনই ঘটে থাকে। আধঘণ্টার লাঞ্চ টাইম। সময় শেষ হলে আবার ঘণ্টা বাজতে থাকবে এবং শ্রমিকেরা দ্রুত এসে কারখানায় যার যার কাজে লেগে যাবে।
শাহ অবাক হয়ে বললেন, সত্যিই। তাহলে ট্যাঙ্ক কেনার দরকার নেই; তার বদলে আমি বরং নেব এক হাজার হুটার।
হিটলার
হিটলার কেবল ক্ষমতাসীন হয়েছেন। তার রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করার আগেই বহুসংখ্যক নাৎসিবিরোধী কৌতুক জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকগুলো হিটলারের নজরেও আসে। তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন এবং এসব কৌতুক রচনাকারীকে গ্রেফতার করে তার সামনে হাজির করার নির্দেশ জারি করেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নাৎসি পুলিশ কাউফম্যান নামক একজন ইহুদিকে ধরে তার সামনে হাজির করে।
হিটলার জিজ্ঞেস করেন, এই ইহুদি কী নাম তোমার?
- কাউফম্যান।
আমাকে এবং শূকরছানাকে জড়িয়ে যে কৌতুকটা বাজারে চালু আছে, সেটা কি তোমার তৈরি করা?
- জি ফুয়েরার, আমার।
যেদিন আমার মৃত্যু হবে, সেটাই হবে ইহুদিদের ছুটির দিন, এই কৌতুকটা কার?
-আমার।
আর এই কৌতুক- যেখানে নদীতে ডুবে মরা থেকে আমাকে একজন ইহুদি রক্ষা করে, আমি যখন তাকে পুরস্কার দিতে চাইলাম, সে বলল আমার জন্য সে কী করেছে, এটা কাউকে না বলাটাই হবে তার জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
- জি, এটাও আমার।
হিটলার বললেন, ব্যাটা ইহুদি তোর কী দুঃসাহস! আমাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করছিস? আমাকে তুই জানিস-আমি কে? আমি থার্ড রাইখের প্রধান নেতা, যে রাজত্ব ১০০০ বছর টিকে থাকবে।
এবার কাউফম্যান বললেন, এক মিনিট দাঁড়ান। এই কৌতুকটার জন্য আমাকে দোষী করতে পারবেন না, এটা আমি আগে কখনো শুনিনি।
এই গল্পের একটি মিসরীয় ভার্সন রয়েছে
প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসেরকে নিয়ে প্রচারিত কিছু কৌতুক তার কানে এলে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং মূল কৌতুক রচয়িতাকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। এমনি একটি কৌতুকের সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ এক বুড়ো মিসরীয় রম্য রচয়িতাকে গ্রেফতার করে নাসেরের সামনে হাজির করে।
নাসের বুড়োকে বললেন, এই বয়সে তুমি নিজের দেশ ও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ঠাট্টা-মশকরা করছ, তোমার লজ্জাশরম বলে কিছু নেই?
বুড়ো নিশ্চুপ।
নাসের বলতে থাকেন: অথচ আমি একটি সোনার দেশ তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, কৃষিতে সংস্কার এনেছি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করছি, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, আমার দেশের মানুষকে সুখী মানুষে পরিণত করছি...।
বুড়ো তাকে বাধা দিয়ে বলতে থাকে, ক্ষমা করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, কসম, আপনি যে কৌতুকটা শোনাচ্ছেন, এটা আমার নয়।
এই কাহিনির একটি রুশ সংস্করণও আছে
সোভিয়েত রাষ্ট্র, সরকার ও ক্রুশ্চেভকে নিয়ে যারা কৌতুক ছড়াচ্ছেন, তাদের ওপর ক্রুশ্চেভ ক্ষুব্ধ। কী কুরুচি, এসব নোংরা কারা ছড়াচ্ছে। অন্তত একটাকে ধরে নিয়ে এসো।
কেজিবি এমন একজনকে ধরে ক্রুশ্চেভের সামনে হাজির করল। লোকটি মুগ্ধ হয়ে কক্ষের চারদিক দেখে বলল, বাহ, বেশ তো, ভালো উন্নতি হয়েছে।
ক্রুশ্চেভ বললেন, এ আর এমন কী! আগামী কুড়ি বছরে কমিউনিজম সর্বত্র পৌঁছে যাবে এবং সবার অবস্থাই এমন হবে।
লেখক খুশিতে আহ্ করে উঠলেন এবং বললেন, আরও একটা কৌতুক পেলাম!
ইংলিশ, জার্মান না রুশ: কে বেশি সাহসী?
ইংলিশম্যান বলল, আমরাই, প্রতি দশজন ইংরেজের একজন নৌযুদ্ধে মারা যাচ্ছি।
জার্মান বলল, আমরা। প্রতি পাঁচজন জার্মানের একজন রণক্ষেত্রে মারা যাচ্ছি।
রাশান বলল, ধ্যাৎ, সবচেয়ে বেশি সাহসী আমরা। প্রতি দুজনের একজন কেজিবির ইনফর্মার, তবুও আমরা রাজনৈতিক জোক বলে যাচ্ছি।